চট্টগ্রামে একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা উইকিপিডিয়া সমৃদ্ধির আহ্বান। ছবি: মতিউড় রহমান অনি/সিসি-বাই-এসএ ৪.০

মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চার কোনো বিকল্পই নাই, সেটা অনস্বীকার্য। আর আমাদের নিজেদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, জীবনকে আমরা নিজেরা যতটা ভালো জানি, বুঝি, বিদেশি কেউ সেরকম জানবেনা। এক সময়ে ইতিহাস লেখা হতোনা, বরং প্রতিটি গোত্রের একজন মুখস্ত করে ধরে রাখতেন ইতিহাস, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।

আজ তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের জগতটা এই ইতিহাস ও জ্ঞানকে ধরে রাখার ডিজিটাল ব্যবস্থায় অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে। তবে এখনোও ইন্টারনেটের অধিকাংশই ইংরেজিতে লেখা, যা আমাদের দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর পক্ষে বোঝা কঠিন। কিন্তু জ্ঞানে অধিকার আমাদের সবার সমান — এটা একটা মৌলিক অধিকার। জ্ঞানকে সবার কাছে পৌঁছে দিতে হলে তা করতে হবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাতেই।

২০০৬ সালের একটি বক্তৃতায় আমি বলেছিলাম, আমাদের নিজেদের ইতিহাস, ভূগোল কিংবা সমাজের কথা, নিজেদের ভাষায় জ্ঞানচর্চার কাজটা আমাদের এই বাংলাভাষীদেরই করতে হবে — বাইরে থেকে এসে কেউ এই কাজটা করে দিয়ে যাবে না। তাই বাংলা উইকিপিডিয়াতে আরো অনেক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্য জড়ো করার কাজটা আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।

বাংলা উইকিপিডিয়াতে নিবন্ধের সংখ্যা এখন ৬৯ হাজার পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আরো অনেক তথ্য দরকার। আমাদের চেয়ে ভাষাভাষীর সংখ্যার দিক থেকে ছোট অনেক ভাষার উইকিপিডিয়া কিন্তু অনেক বেশি সমৃদ্ধ। ২০০৬ সালের ১৩ বছর পর এই ২০১৯ সালে ইন্টারনেটের দুনিয়াটা পাল্টে গেছে, মোবাইল ইন্টারনেটের সুবাদে দেশের কোটি মানুষের হাতের নাগালে এখন ইন্টারনেট। তাই আশা করি, বাংলা উইকিপিডিয়ার মতো সারা সমাজের উপকারে লাগে এমন একটি মহতী প্রকল্পে আরো অনেক উদ্যমী মানুষ যোগ দিবেন।

আমাদের তরুণ সমাজের উপরে আমার খুব বড় আস্থা আছে, আমি জানি, এই সোনার বাংলার সোনার মানুষেরা দেশের টানে ভাষার টানে এগিয়ে আসতে কখনো পিছপা হয়নি, তারা এগিয়ে আসবেই। বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের এ অনেক অনেক ঋণ। এ তো আমাদের মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা।

লেখক: রাগিব হাসান, কম্পিউটার বিজ্ঞানী, ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহাম-এর কম্পিউটার বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক, উইকিপিডিয়ার প্রাক্তন প্রশাসক, উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ-এর বর্তমান উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা বোর্ড সদস্য, লেখক এবং শিক্ষক.কম-এর প্রতিষ্ঠাতা।

উইকিবার্তা
Translate »
Share This