
অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাচ্ছে ব্রাজিলের জাতীয় জাদুঘর। ছবি: ফিলিপ মিলানেজ/সিসি-বাই-এসএ ৪.০
গত ২ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্রাজিলের ভস্মীভূত জাতীয় জাদুঘরের শতাধিক ছবি এখন উইকিমিডিয়ার মিডিয়া সম্পর্কিত প্রকল্প কমন্সে মুক্ত লাইসেন্সের অধীনে চলে এসেছে।
রিও ডি জেনিরোতে অবস্থিত প্রায় দুইশ’ বছরের প্রাচীন ব্রাজিলের এই জাতীয় জাদুঘরে গত ২ সেপ্টেম্বর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর ফলে দেশটির অন্যতম বৃহৎ এ জাদুঘরের অধিকাংশই পুড়ে গেছে বলে জানা যায়। পুড়ে যাওয়া সামগ্রির মধ্যে ছিল ব্রাজিলের প্রথম মানবফসিল এবং প্রায় ৫.৫ টন ওজনের উল্কাখণ্ড।
জাদুঘরের সাথে গ্ল্যাম-উইকি (GLAM = গ্যালারি, লাইব্রেরি, আর্কাইভ এবং মিউজিয়াম) প্রকল্প নিয়ে কাজ চলমান ছিল। এর মাধ্যমে শিঘ্রই প্রাচীন এ জাদুঘরের প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের ডিজিটাল সংস্করণ মুক্ত কপিরাইটের অধীনে কমন্সে চলে আসার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পূর্বেই মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। জাদুঘরের সম্পদের কোনো ডিজিটাল সংস্করণ ছিল না, ফলে যে প্রাচীন সম্পদ পুড়ে গেছে তা আর কখনোই ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে না।
উইকিপিডিয়ান ডর্নিক (Dornicke) ২০১৫ সালে এই জাদুঘরের কিছু ছবি কমন্সে আপলোড করেছিলেন। অগ্নিকাণ্ড ঘটার আগ পর্যন্ত এগুলো ছাড়া আর কোনো ছবি কমন্সে ছিল না। গত ৪ সেপ্টেম্বর তিনি পর্তুগিজভাষী উইকিপিডিয়ানদের সমন্বয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এ জাদুঘরের ছবি কমন্সে আপলোড করার আহ্বান জানান। ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ তাদের সংগ্রহে থাকা ছবি মুক্ত লাইসেন্সে কমন্সে আপলোড করে দিতে শুরু করেন। ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার ছবি কমন্সে চলে এসেছে বলে জানা যায়।

জাদুঘরের ছবি সংগ্রহে উইকিপিডিয়ার ক্যাম্পেইন। ছবি: উইকিপিডিয়ার অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট
ডর্নিক এবং আরো উইকিপিডিয়ানদের মধ্যে যারা এ কাজে এগিয়ে এসেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলেন সাও পাওলোর ফ্যাকালদাদে ক্যাসপার লিবেরোর সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক জোয়াও আলেক্সান্দ্রে পেসচ্যানস্কি। তিনি জানান, ‘আমি জানতে পারি জাতীয় জাদুঘরের কোনো ডিজিটাল, উচ্চমানসম্পন্ন ছবি নেই। আমরা এখনও নিশ্চিত হতে চাইছি বিষয়টি আসলেই এমন কিনা। তবে এই তাড়না থেকেই আমি এবং অন্যান্য উইকিপিডিয়ানরা চেষ্টা করছি মানুষকে ছবি দিতে উৎসাহিত করতে।’
উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন এ কাজে সহায়তার উদ্দেশ্যে ব্রাজিল সম্প্রদায়ের সাথে সরাসরিভাবে যুক্ত হয়েছে। ফাউন্ডেশন তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে এ বিষয়ে প্রচারণা চালিয়েছে।
উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের কমিউনিকেশন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট কুই কিনিয়ানজুই জানান, ‘এক রাতের ব্যবধানে মানব ইতিহাসের একটি বড় অংশের চিহ্ন মুছে গেছে জানতে পেরে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। অগ্নিকাণ্ডের পূর্বে আমরা এই সংগ্রহ পাইনি, এটা সত্যিই দুঃখজনক। তবে এখন আমরা ব্রাজিলের উইকি সম্প্রদায়ের মাধ্যমে চেষ্টা করছি যেন তারা যা গেছে তার কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনতে পারেন।’