দেখতে দেখতে ১ লক্ষ নিবন্ধের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেললো বাংলা উইকিপিডিয়া – এটা কি ভাবা যায়? অন্তত আমি যখন নিয়মিত ছিলাম উইকিপিডিয়াতে, তখন আমি তো ভাবতে পারিনি। আমি ভাবতে না পারলেও, উইকিপিডিয়া বড় হবে, সামনে এগোবে – সেই স্বপ্ন বাংলাদেশ আর ভারতের একঝাঁক উইকিপিডিয়ান, উইকিমিডিয়ান দেখতেন আর বিশ্বাস করতেন বলেই আজ আমরা বাংলা উইকিপিডিয়ায় ১ লক্ষ নিবন্ধের মাইলফলক ছুঁতে পেরেছি। শুধু ভাবতেই মনটা ভরে যায় যে, এই এক লক্ষ নিবন্ধের মধ্যে আমারও সোয়াশ’র মতো নিবন্ধ আছে; আমিও কোনো না কোনোভাবে এই মাইলফলকের একজন অংশীদার।
এখন বাংলা উইকিপিডিয়া যে অবস্থায় আছে বা যেভাবে এগোচ্ছে, প্রথমদিকে বাংলা উইকিপিডিয়ার অগ্রসরতার এই গতি ছিলনা। সেই সময়কার বাধাগুলো, চ্যালেঞ্জগুলো আমরা জানতে পারব এই সংখ্যায় প্রকাশিত উইকিপিডিয়ান রাগিব হাসানের স্মৃতিচারণমূলক লেখাটি থেকে। জানতে পারবো সেই সময়ে মুনির হাসান, বেলায়েত হোসেন, মাহে আলম খানসহ আরো অনেক উইকিপিডিয়ানের হাত ধরে উইকিপিডিয়ার এগিয়ে চলার অতীতও। এছাড়া আরেকজন নিবেদিতপ্রাণ উইকিপিডিয়ান তানভির রহমান-এর আরেকটি লেখা থেকেও আমরা সেই সময়কার বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কেও জানতে পারবো। উইকিপিডিয়ান এবং উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ-এর প্রাক্তন সভাপতি আলী হায়দার খান তন্ময়ও লিখে পাঠিয়েছেন সেই সময়কার উইকিপিডিয়ায় তাঁর হাঁটি-হাঁটি-পা-পা করে এগিয়ে চলার স্মৃতিচারণা। পাশাপাশি ওপার বাংলা থেকেও উইকিপিডিয়ানরা সমানভাবে সক্রিয় ছিলেন, আর অর্ণবদা, সপ্তর্ষিদাসহ সক্রিয় ছিলেন আরেকজন প্রথিতযশা উইকিপিডিয়ান এবং প্রশাসক জয়ন্ত নাথ। জয়ন্ত দা’র সেই সময়কার অভিজ্ঞতাগুলো জানতে তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন অংকন ঘোষ দস্তিদার। বিন্দু বিন্দু করে এগিয়ে চলা বাংলা উইকিপিডিয়ার সেই পদচারণার একটি রূপরেখা পাওয়া যাবে উইকিমিডিয়ান আল রিয়াজ উদ্দীন রিপনের লেখায়। আর এই পদচারণার পিছনে অবদান রাখবার অভিপ্রায়ে জন্ম হওয়া ‘উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ’ আর তার কার্যক্রম নিয়েও লিখেছেন উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ-এর বর্তমান সভাপতি এবং উইকিপিডিয়ান শাবাব মুস্তাফা।
বিশেষ এসব লেখার পাশাপাশি নিয়মিত বিভাগেও প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন লেখা। তার মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে উইকিপিডিয়ান হিয়া মুবাশ্বিরা এবং গৌতম রায় লিখেছেন শিক্ষাক্ষেত্রে উইকিপিডিয়ার ব্যবহার নিয়ে। এছাড়া চলচ্চিত্র নিয়ে বাংলা উইকিপিডিয়ার পদচারণা নিয়ে লিখেছেন মাহবুবুল হক ওয়াকিম। এরও বাইরে, উইকিপিডিয়ার বিভিন্ন আঞ্চলিক সম্প্রদায়ের খবরাখবরের পাশাপাশিও থাকছে আরো আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা।
যাহোক, বাংলা উইকিপিডিয়ার ১ লক্ষ নিবন্ধের মাইলফলক অর্জনের এই বিশেষ আনন্দময় উপলক্ষকে উদযাপন করবার লক্ষ্যেই আমরাও চিন্তা করি উইকিবার্তা থেকে একটি বিশেষ সংখ্যা বের করবার। সেই লক্ষ্যেই অনলাইনে সভা আয়োজন করে উইকিবার্তা এবং উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের কারিগরী দল এই বিশেষ সংখ্যা বের করবার জন্য লেখা আহ্বানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। আর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলা উইকিপিডিয়ার এই আনন্দলগ্নে আমাদেরকে শুভেচ্ছাস্বরূপ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন উইকিপিডিয়ার ‘উইকিমিডিয়ান-ইন-রেসিড্যান্স’ লেইন র্যাসবেরি; লেখা দিয়েছেন বাংলা উইকিপিডিয়ায় নিয়মিত, অনিয়মিত অনেক উইকিমিডিয়ানও। যাঁদের লেখা প্রকাশিত হয়েছে, তাঁদের বাইরেও আমরা প্রাক্তন উইকিমিডিয়ান বেলায়েত হোসেন, মুনির হাসানসহ আরো অনেকের কাছে লেখা আহ্বান করেছিলাম। কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় তাঁরা অনেকেই লিখতে পারেননি এই সংখ্যায়। তবু আমরা নতুন-পুরাতন সব উইকিমিডিয়ানকে একত্র করবার একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম যেন, এই এক লক্ষ নিবন্ধের পিছনের প্রতিজন উইকিমিডিয়ানের অবদানকে আমরা স্মরণ করতে পারি। আমরা পেরেছি কিনা, তা জানি না; তবে, এতটুকু বলতে পারি, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।
কোভিড-১৯-এর বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে সারা পৃথিবীই কিছুটা থমকে গিয়েছিল। যদিও উইকিপিডিয়া আর এই সহ-প্রকল্পগুলো এই সময়ে যথেষ্ট সক্রিয় ছিল, তবু প্রকাশ করবার মতো খুব বেশি সংবাদও ছিল না। তাই ইচ্ছে থাকাসত্ত্বেয় উইকিবার্তা নিয়মিত প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না। তবে এতটুকু ভালোলাগা তো অবশ্যই কাজ করছে যে, এই বৈশ্বিক মহামারির পরেও বাংলা উইকিপিডিয়ার এক আশা জাগানিয়া সংবাদ নিয়ে আমরা হাজির হতে পেরেছি, এবং পাঠকদের মতোই আমরাও আশা করছি, নতুন বছরে উইকিবার্তাও নিয়মিত প্রকাশিত হবে।
অল্প সময়ের মধ্যে এই বিশেষ সংখ্যাটি আয়োজনের উদ্যোগ নেবার জন্য উইকিবার্তা দলকে, উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের কারিগরী দলকে এবং অতি অবশ্যই আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা উইকিমিডিয়ানরা যে সাড়া দিয়েছেন তাঁদের প্রত্যেককে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা এবং ভালোবাসা। আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রকাশিত এবারের বিশেষ সংখ্যা আপনাদের ভালো লাগলেই আমাদের সার্থকতা।
অভিনন্দন বাংলা উইকিপিডিয়া! অভিনন্দন সকল উইকিপিডিয়ানকে!!
আজকের এই আনন্দের দিনে আমরা ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সদ্যপ্রয়াত বাংলা উইকিপিডিয়ান আদিত্য কবিরকে।
– মঈনুল ইসলাম
১ জানুয়ারি ২০২১