
লেইন র্যাসবেরি; সিসি-বাই-এসএ ৪.০
লেইন র্যাসবেরি অনলাইন বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়াসহ এর সহপ্রকল্পের সাথে যুক্ত দীর্ঘ এক যুগ ধরে। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার উইকিমিডিয়ান-ইন-রেসিডেন্স হিসেবে কর্মরত আছেন। উইকিপিডিয়া এবং এসম্পর্কিত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার সাথেও তিনি যুক্ত ছিলেন। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন, তখন থেকেই বাংলা সম্প্রদায়ের কাজের সাথে পরিচিত এবং শুভাকাঙ্ক্ষী। আর তাই ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে সুইডেনের স্টকহোমে আয়োজিত উইকিম্যানিয়া সম্মেলনে উইকিবার্তায় একটি সাক্ষাৎকারের জন্য তাঁকে অনুরোধ করা হলে তৎক্ষণাৎ সম্মত হন। বাংলা উইকিপিডিয়ার শুভক্ষণে উইকিবার্তার পাঠকদের জন্য উইকিমিডিয়া প্রকল্পের নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবক লেইনের সাক্ষাৎকারটি নেয়া হল। জানালেন উইকিমিডিয়া নিয়ে তাঁর চিন্তা, আর বাংলা সম্প্রদায় নিয়ে তাঁর মতামত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অংকন ঘোষ দস্তিদার।
[Read this post in English language]
উইকিবার্তা: আপনি ২০০৮ সাল থেকে উইকিমিডিয়ার কার্যক্রমের সাথে যুক্ত। বর্তমানে এই কার্যক্রমের গতি বিষয়ে আপনার মতামত কী? আমরা কি সঠিক পথে, সঠিক গতিতে এগোচ্ছি?
লেইন র্যাসবেরি: আমি সবসময় উইকিমিডিয়া স্বেচ্ছাসেবকদের আরো বিস্তৃতভাবে সহযোগিতা করার পক্ষে। স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতা করাটা বিশ্বের সবার জন্য জ্ঞান নিশ্চিত করার সবচেয়ে দ্রুত, কম ব্যয়বহুল, আর সবচেয়ে নৈতিক উপায়। উইকিমিডিয়া আন্দোলন বৈশ্বিকভাবে অনেক অর্থ সংগ্রহ করে। আমার মনে হয় অনেক স্বেচ্ছাসেবক আছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উইকিমিডিয়ার স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমের উন্নতির জন্য, যারা এ অর্থের অংশ আরো ব্যাপকভাবে পেতে চান। ঐসকল দেশে হয় ছোট আকারের উইকিমিডিয়া চাপ্টার আছে কিংবা হয়তো এখনো তা নেই।
আমরা ২০২১ সালের ১৫ জানুয়ারি উইকিপিডিয়ার বিংশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দ্বারপ্রান্তে আছি। এই সাফল্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু স্বেচ্ছাসেবকেরা। ভবিষ্যতে সফল হওয়ার জন্য উইকিমিডিয়া আন্দোলনের মূল্যবোধ আর আদর্শ নির্ধারণের অধিকার রাখে। এই আওতার মধ্যে কিভাবে বৈশ্বিক আন্দোলনের পুঁজি বন্টন করা হবে তাও পড়ে।
উইকিবার্তা: ২০১৭ সালে প্রকাশিত “Why Medical Schools Should Embrace Wikipedia: Final-Year Medical Student Contributions to Wikipedia Articles for Academic Credit at One School” শীর্ষক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের কো-অথর ছিলেন আপনি। সেখানে বলা হয় ক্লিনিকাল প্র্যাকটিসে চিকিৎসীয় তথ্যের ক্ষেত্রে [উইকিপিডিয়ার] উল্লেখযোগ্য ব্যবহার হওয়া সত্ত্বেও প্রশিক্ষক এবং শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষার্থীদের উইকিপিডিয়া ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করেন। এর কারণ ছিল ভুল তথ্য আর তথাগত সম্পাদকদের উপরে নিয়ন্ত্রণের অভাব। ২০১৯ সালে অপর এক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রমাণ করে যে, এ ব্যাপারে আপনি গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুরুর থেকে এখন পর্যন্ত চিত্রটা কতটা পাল্টেছে?
লেইন র্যাসবেরি: জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের কথা উঠলে আমি এখনো উইকিপিডিয়ার মাধ্যমে তথ্য প্রদানের পরামর্শই দেব। আপনি যে প্রবন্ধের কথাটি বলেছেন, সেখানে মেডিক্যালে বিভিন্ন শ্রেণীতে পাঠরত শিক্ষার্থীরা তাদের অধ্যাপকের সাথে মিলে উইকিপিডিয়ায় মেডিকেল-বিষয়ক তথ্য দিচ্ছিলেন। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভালো তথ্য যেমন দিতে পারছেন, একইসাথে উইকিপিডিয়ার পাতা পরিদর্শন সংখ্যার মাধ্যমে কতজন মোবাইল বা ডেস্কটপ দিয়ে সেই তথ্য পড়ছেন তা-ও জানা যাচ্ছে।
আরো অনেকে প্রবন্ধ লিখে দেখিয়েছে যে, এভাবে শিক্ষার্থীরা সকলের সাথে তথ্য ভাগাভাগি করে নিতে পারে, আর একইসাথে ভালো ফলাফলও অর্জন করতে পারে। এটা তখনই সম্ভব হয় যখন স্বেচ্ছাসেবকেরা, শিক্ষার্থীরা আর প্রফেশনালরা জনগণের সুবিধার জন্য উইকিপিডিয়ায় উন্মুক্তভাবে তথ্য প্রদান করে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে শেখানোর কাজটাও করা সম্ভব হয়। প্রথাগত প্রকাশনা পদ্ধতিতে ভালো তথ্য থাকলেও, যারা পড়বেন, তাদের জন্য বেশ ব্যয়বহুল; সে হিসাবে উইকিপিডিয়া সবচেয়ে ভালোভাবে পাঠকদের কাছে পৌঁছে যায়, তবে এর মান নির্ভর করে যারা লিখছেন তারা কিভাবে লিখছেন, তার উপর।
আমি উইকিপিডিয়ায় আরো অনেকের মত চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্যাবলী যোগ করি, তবে বিষয়-নির্বিশেষে আমি উৎসাহিত করতে চাই যেন আরো অনেক অধ্যাপক উইকিপিডিয়ায় প্রকাশ করা বিষয়ক প্রজেক্ট অনুমোদন করেন। আমি ঐ প্রবন্ধটি লিখেছি বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল, এখনো অধিকাংশ মানুষ ডিজিটাল লেখার চেয়ে প্রকাশিত লেখাকে অধিক গুরুত্ব বা সম্মান দেয়। অর্থাৎ খুব বেশি কিছু পরিবর্তিত হয়নি। তবে প্রতি বছর উইকিমিডিয়ার ওয়েবসাইটগুলোতে অনেক নতুন লেখা আসে, অনেক সফটওয়্যার উন্নত করা হচ্ছে, অনেক সরঞ্জাম তৈরি হচ্ছে সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য। আমি মনে করি এমন একটা সময় আসবে যখন উইকিপিডিয়ায় লেখা ও প্রকাশ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার নিয়মিত অংশ হয়ে উঠবে।
উইকিবার্তা: আপনি দীর্ঘদিন ধরে ‘উইকিমিডিয়ান ইন রেসিডেন্স’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, প্রথমে কনজ্যুমার রিপোর্টসের জন্য এবং ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ায়। আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
লেইন র্যাসবেরি: উইকিমিডিয়ান ইন রেসিডেন্স হওয়ার মাধ্যমে নিউ মিডিয়ায় কমিউনিকেশন্স-সম্পর্কিত দায়িত্ব পালন করতে হয়। তুলনার জন্য অন্যান্য নিউ মিডিয়ার দায়িত্বের কথা বললে ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য লেখালেখির কথা বলা যেতে পারে। এই সকল দায়িত্বের মধ্যে একটা সদৃশ ব্যাপার হল ডিজিটাল মিডিয়ায় কতজন নিবন্ধ বা পোস্টটি পড়েছে তার পরিসংখ্যান দেখতে পাওয়া যায়। যেমন, যে-কেউ চাইলেই বাংলা উইকিপিডিয়ার জনপ্রিয়তম নিবন্ধগুলোর তালিকা দেখতে পাবেন এখানে। কতজন পড়ছেন তার নিখুঁত সংখ্যা জানার ব্যাপারটা আগেকার সময়ের মুদ্রিত মিডিয়া থেকে ডিজিটাল মিডিয়াকে আলাদা করে তোলে।
একজন উইকিমিডিয়ান ইন রেসিডেন্স নিবন্ধে তথ্য প্রকাশ করেন এবং পরবর্তীতে মূল সংস্থায় কতজন তার লেখা পড়ছেন এ সম্পর্কিত বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেন। উইকিমিডিয়ান ইন রেসিডেন্স হওয়ার অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল “পাতার পরিদর্শন” ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা। আমি প্রায়শই বলি উইকিপিডিয়া কার্যকর, কারণ অনেক মানুষ এটা পড়ে এবং আমরা পাতার পরিদর্শন সংখ্যার মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে পারি। মানুষ বিভিন্ন অ্যাপ আর অনলাইন সেবা ব্যবহার করে, আর সেখানে পরিদর্শন সংখ্যা, লাইক সংখ্যা, আপভোট, রিটুইট প্রভৃতি নম্বর দিয়ে বিচার করতে অভ্যস্ত। বাকি অনেকের ক্ষেত্রে এভাবে পরিদর্শন সংখ্যা দিয়ে যোগাযোগের সাফল্য বিচার করার ব্যাপারটা নতুন, আর আমাকে সরাসরি তাদের সাথে কথা বলতে হবে।
এই কাজের অপর একটি চ্যালেঞ্জ হলো কিছু ক্ষেত্রে আমার কাজ সম্পর্কে জানার পরে মানুষ অদ্ভুত আচরণ করে। যেহেতু বিশ্বের প্রায় সবকিছু নিয়েই উইকিপিডিয়ায় নিবন্ধ আছে, তাই তারা তাদের অপছন্দের সবকিছুর জন্য আমাকে দায়ী করে! অনেকেই আমাকে বিজ্ঞাপনধর্মী সম্পাদনার জন্য বলে। এধরনের ব্যাপারগুলো প্রতিরোধের জন্য আমার পরামর্শ হলো যারা কোনো সংস্থার সাথে যৌথভাবে উইকিপিডিয়ার প্রকল্প নিয়ে কাজ করবে, তারা যেন শুরুতেই ব্যাখ্যা করে নেয় যে, জ্ঞান নিশ্চিত করার জন্য উইকিপিডিয়ার সম্পাদকেরা কাজ করেন; কিন্তু যে সংস্থার সাথে কাজ করা হচ্ছে, সেই সংস্থা বা সংস্থা-সম্পর্কিত কোনো ব্যাপারে তথ্যাবলী যুক্ত করার কাজ তারা করেন না।
উইকিবার্তা: ‘উইকিমিডিয়ান-ইন-রেসিডেন্স’-এর প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারটি কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাজে সহজভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব?
লেইন র্যাসবেরি: বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক ভাষায় বিদ্যমান তথ্যের সবচেয়ে বেশি কাঙ্ক্ষিত, প্রকাশিত, পাঠকৃত, আর আলোচনাকৃত মাধ্যম উইকিপিডিয়া। আপনি যদি জনমানুষের উন্নয়নের জন্য তথ্য বন্টন করতে চান, তবে শিক্ষামূলক বিষয়াদি উইকিপিডিয়ায় দেয়ার মাধ্যমে কার্যকরীভাবে সকলে মানুষের জন্য বিনামূল্যে তথ্য উন্মুক্ত করতে পারবেন। এর সপক্ষে আমরা পাতার পরিদর্শন সংখ্যা দেখাই।
উইকিবার্তা: আমরা সবাই কঠিন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, অর্থাৎ চলমান কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী। আপনি কি এই মহামারীর সময়ে উইকিপিডিয়ার অবদানের ব্যাপারে কিছু বলবেন?
লেইন র্যাসবেরি: উইকিপিডিয়া কোভিড-১৯ বিষয়ক তথ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত তথ্যউৎস। উইকিপিডিয়াই একমাত্র মাধ্যম, যা বিশ্বের প্রতিটি জায়গায় বিজ্ঞান ও চিকিৎসা সম্বন্ধীয় বিশেষজ্ঞদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। আমরা নিশ্চিত করেছি যেন উইকিপিডিয়ার তথ্য বোধগম্য হয়, আর এরপরে তা যত বেশি সম্ভব ভাষায় অনুবাদ করেছি। উইকিপিডিয়ার নিবন্ধে লেখার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকেউ বিনামূল্যে সেই তথ্য পড়তে পারেন।
কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে উইকিপিডিয়ার উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো শুধুমাত্র চিকিৎসা সম্বন্ধীয় তথ্যাবলীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। কোয়ারেন্টিনও এই কৌশলের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার; কারণ মানুষকে কিছু শেখানোর জন্য, আনন্দে থাকার জন্য, এবং আরো ভালো একজন হওয়াটা উইকিপিডিয়ার অবদানের অংশ। কোভিড-১৯ সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে উইকিপিডিয়ার তথ্য সম্পাদনা করা কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে কাজের অংশ, কারণ পাঠকদের আনন্দে থাকাটা প্রয়োজনীয়। এমনকি যখন মানুষ সমাজ, ইতিহাস, খেলাধুলা, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, বা অন্য কিছু নিয়ে লিখছেন, তখনও তারা কিছু পর্যালোচনা করছেন আর অন্যান্যদের লেখা নিয়ে কথা বলছেন। এর মাধ্যমে আমরা একটি সম্প্রদায় তৈরি করেছি যেখানে সবাই সবাইকে সহযোগিতা করেন।
উইকিবার্তা: অনেক বছর আগে, ২০১৩ সালে, আপনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। এখন প্রায় ২০২১ সাল। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাংলা সম্প্রদায় কতটা পরিবর্তন পার করেছে? বৈশ্বিক উইকি আন্দোলনে উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে আপনার মতামত কী?
লেইন র্যাসবেরি: আমি মার্কিনী, তাই আমি প্রথমেই বলতে চাই বাংলাদেশি আমেরিকানরা কিভাবে বাংলা ভাষাকে তুলে ধরছেন। আমি সাধারণভাবে উইকিমিডিয়া ইউ ইয়র্ক সিটির সাথে কাজ করে থাকি, যেখানে একটি বাংলাদেশি সম্প্রদায়ও রয়েছে। নিউ ইয়র্ক সিটিতে সাতটি ভাষা আছে যা সবচেয়ে বেশি স্বীকৃত: ইংরেজি, স্প্যানিশ, চীনা, রুশ, কোরীয়, হাইতিয়ান ক্রেওল, আর বাংলা।
এই স্বীকৃতির কিছু অর্থ আছে। যদিও অধিকাংশ সাবওয়ের প্রতীক ইংরেজি আছে, তবুও কোনো বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজনে প্রতীক বাংলাতেও থাকে। এগুলো কপিরাইটকৃত, তাই আমি চাইলেই ছবিগুলো কমন্সে দিতে পারব না। তবে কিছু উদাহরণ আছে। এই প্রতীকগুলো সকলকে জানায় যে, একটা সম্প্রদায় আছে, যারা বাংলা ভাষা ব্যবহার করে।
trilingual on the nyc subway: English, Spanish, and Bengali pic.twitter.com/FTNyhTz6Al
— James Marca (@jmarca) October 14, 2014
আরেকটা জায়গায় বাংলা ব্যবহৃত হয়, সেটি হল নির্বাচনে। কেবলমাত্র মার্কিন নাগরিকেরাই ভোটাধিকার রাখেন, সেটা সত্য। তবে নিউ ইয়র্ক সিটিতে যথেষ্ট সংখ্যক মার্কিন নাগরিক আছেন যারা বিভিন্ন মার্কার উপর বাংলা ভাষা দেখতেই বেশি পছন্দ করেন। ২০১৬ সাল থেকে বাংলা ভাষা ব্যালটে থাকে।
জ্যাকসন হাইটস নামক এলাকায় একটি ছোট বাংলাদেশি পাড়াও রয়েছে। তবে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় আমি খেয়াল করলাম যে উইকিমিডিয়া কমন্সে এর তেমন ছবি নেই। তবে এই এলাকার দোকানে বাংলা ভাষায় অনেক কিছু লেখা থাকে। অনেকেই বাংলাদেশি পাড়া দিয়ে যাতায়াত করে, কারণ সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাবওয়ে রয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক লা গার্দিয়া বিমানবন্দরের নিকটতম সাবওয়ে। তাই অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ব্যবহারকারী সকলে যখন ট্রেন স্টেশন ব্যবহার করে, এই লিটল বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে যায়।
যেহেতু এখানের অনেক পরিবার বাংলা ব্যবহার করে, এই এলাকার স্কুলগুলোতে দ্বৈত ভাষা চালু আছে, যার মাধ্যমে বাচ্চারা চাইলে বাংলা ও ইংরেজি দুই-ই পড়তে পারে। কেন আমি নিউ ইয়র্ক সিটি নিয়ে বলছি? এর কারণ হল শহরের বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ভাষা ব্যবহার করে, যারা যাতায়াত করে থাকে তারা সচরাচর অল্পকিছু ভাষা দেখে থাকে, তন্মধ্যে বাংলা একটি। যারা বাংলাদেশ নিয়ে কিছুই জানে না তারাও এই লেখা দেখে, এবং এ সম্পর্কে ধারণা লাভ করে।
অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র বাংলাদেশি সম্প্রদায় নেই, কিন্তু যেখানে আছে সেখানে অন্তত বাংলাদেশিদের ছোট একটা দল থাকে। একই সাথে একটা মজার ব্যাপার ঘটে। যখন বড় কোনো উৎসব হয়, এবং কাছেপিঠে কিছু বাংলাদেশি থাকে, তখন তারা মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ছোট পসরা সাজায়। বর্তমানে আমি যে শহরে থাকি সেখানে প্রায় ৪৫,০০০ মানুষ আছে। আমি ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ায় আছি আর এখানকার শিক্ষার্থীরা এরকম অনেক কিছুর আয়োজন করে থাকে। তবে আমি মনে করি যে, যারা শিক্ষার্থী নয় তারাও ভাষার জন্য এরকম আয়োজন করে থাকে, এমনকি ছোট শহরের ক্ষেত্রেও সেটা সত্য।
এত কথা কেন বলছি? কারণ বৈশ্বিক উইকিমিডিয়া সম্প্রদায়ে উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের উপস্থাপনা মূলত বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের বাংলাদেশিদের উপস্থাপনারই প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশি সংস্কৃতি অবশ্যই সাহিত্য, লেখালেখি, ভাষা, এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে ধারণ করে। এই ব্যাপারগুলো উইকিমিডিয়া সম্প্রদায়ের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে এই ব্যাপারগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয় এবং চাওয়া হয় যেন আরো সংস্কৃতি ভাষার জন্য দৃঢ়ভাবে এই অনুভূতি ধারণ করে বিশ্বব্যাপী তা বহন করে।
বাংলাদেশের উইকিমিডিয়া সম্প্রদায় প্রতি বছর তাদের কার্যক্রম রিপোর্ট করে, স্বেচ্ছাসেবকদের অধিকার এবং গ্র্যান্টের ফান্ডের ক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে বাস্তবিক দাবি করে, এবং অন্যান্য উইকিমিডিয়া চ্যাপ্টারের মতো অদ্ভুত সমস্যায় তারা পড়ে না। এসবের জন্য তাদের খ্যাতিও আছে। আমি চাই উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ আরো উন্নতি করুক। একই সাথে আমি উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন বা অন্য সম্ভাব্য সহযোগী সংস্থার প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে উইকিমিডিয়া বাংলাদেশকে মডেল হিসেবে বিবেচনার জন্য সুপারিশ করব।
উইকিবার্তা: বাংলা উইকিপিডিয়া সম্প্রতি এক লক্ষ নিবন্ধের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। আপনি কি এ উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?
লেইন র্যাসবেরি: অভিনন্দন! যত বেশি নিবন্ধ হবে, তত বেশি সহযোগিতা পাওয়ার দিক সহজ হবে। আমি কামনা করি বাংলা উইকিপিডিয়া আরো বর্ধিত হবে এবং স্কুল, এনজিও, বাংলাদেশের সরকারি সংস্থা এবং জ্যাকসন হাইটস থেকে সম্মান পাবে। যখন এগুলো সম্ভবপর হবে, তখন তারাই সেই সাফল্যের দাবিদার হবেন যারা শুরু থেকে এই প্রকল্পে বিশ্বাস রেখেছেন এবং প্রথম এক লক্ষ নিবন্ধের জন্য কাজ করেছেন।
উইকিবার্তা: আপনাকে ধন্যবাদ।
লেইন র্যাসবেরি: আপনাকেও ধন্যবাদ।