
মেরিল্যান্ডে অবস্থিত ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির সদর দপ্তর (ছবি: ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির সৌজন্যে)
যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রাদেশিক বিচারক উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের দায়ের করা ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির বিরুদ্ধে একটি মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। মামলাটি ছিল নাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির আপস্ট্রিম নামক নজরদারি কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে।
উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন যদিও প্রমাণ করতে পেরেছিল যে উইকিপিডিয়ার তথ্য নাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির নজরদারির আওতায় পড়েছিল, তারা (উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন) প্রমাণ করতে পারেনি যে তথ্যগুলোর অনুলিপিকরণ করা হয়েছিল, কারণ আপস্ট্রিম কর্মসূচীতে ব্যবহৃত সফটওয়্যারগুলোর ব্যবহার গোপনীয়।
কোনো বিষয়ের সঠিক উপলব্ধি এবং সেই একই বিষয়ের ভুল উপলব্ধি – এই দুই উপলব্ধি পুরোপুরি অপ্রতিম নয়।
মামলাটি প্রথমবার ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে নয়টি সংস্থার পক্ষে দায়ের করে এসিএলইউ। তবে আদালত এক বছর পর মন্তব্য করেন যে বাদীর যুক্তি সম্পূর্ণ যুক্তিসংগত নয়। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে মামলাটি পুণরায় আদালতে তোলা হয়। উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনকে মামলাটি এগিয়ে নেয়ার অধিকার দেয়া হয়। এর কারণ উইকিমিডিয়ার ব্যবহারকারীরা এতো বেশি পরিমাণ তথ্য ডাউনলোড করে যে পরিসংখ্যাগত দিক থেকে উইকিমিডিয়ার ওয়েব-ট্রাফিক ‘আপস্ট্রিম’ কর্মসূচীর নজরদারি ক্ষমতার চেয়ে অধিক। উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন অভিযোগ করে যে, ‘আপস্ট্রিম’ কর্মসূচীটি অবৈধভাবে বিশাল পরিমাণ তথ্য নজরদারি করছে যা বাদীর তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে মৌলিক গোপনীয়তা সুরক্ষার বিষয়টিকে ব্যাহত করছে। বিচারক টি.এস. এলিস তাঁর রায়ে উল্লেখ করেন যে, ‘আপস্ট্রিম’ কর্মসূচী ইন্টারনেট ও টেলিফোন সেবাদাতাদের মধ্যকার তথ্য আদান-প্রদানের সময় তথ্য সংগ্রহ করে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার দাবি করে যে আপস্ট্রিম কর্মসূচী বৈদেশিক গোয়েন্দা নজরদারি বিধিমালার ৭০২ অনুচ্ছেদ মোতাবেক পরিচালিত হয়, যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিদেশীদের লক্ষ্য করে কাজ করে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার ‘আপস্ট্রিম’ সম্পর্কে বলে যে, ‘কিছু নির্দিষ্ট ইন্টারনেট ব্যাকবোন (কাঠামো) দিয়ে প্রবাহিত তথ্য নজরদারি করা হয় যাতে দেশের অভ্যন্তরে তথ্যের আদান-প্রদান বিবেচনা করা হয়না। এছাড়া নাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির নীতিমালা অনুসারে প্রাপ্ত মানুষদের তথ্যের আদান-প্রদান নজরদারি করা হয়। এই দুই নজরদারিতে ফেঁসে যাওয়া তথ্য সরকারী ডেটাবেইজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন ‘আপস্ট্রিম’ কর্মসূচীর আইনগত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বলে যে, এটি সংবিধানের প্রথম ও চতুর্থ সংশোধন ভঙ্গ করেছে।
উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ স্কট ব্র্যাডনার বলেছেন যে, “এনএসএ সম্ভবত তার নজরদারি পয়েন্ট দিয়ে প্রবাহিত অধিকাংশ তথ্য অনুলিপি করে এবং তা ফিল্টার করে।” তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন যে, “এনএসএ উইকিমিডিয়ার অনেক তথ্য অনুলিপি করেছে এবং উইকিমিডিয়ার তথ্য আদান-প্রদানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে।”
উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন বলেছে যে, ‘আপস্ট্রিম’ কর্মসূচী সম্প্রদায়ের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ ব্যাহত করেছে, যা উইকিপিডিয়ার অনলাইন পাঠক কমে যাওয়া থেকে প্রমাণিত হয়। নজরদারিটি ৩২ মাস ধরে পরিচালিত হয়েছিল, যা ২০১৪-এর আগস্টে শেষ হয়। এরপরে মামলাটি দায়ের করা হয়। অর্থাৎ বর্তমানে পাঠক কমে যাওয়ার সাথে ‘আপস্ট্রিম’-এর সম্পর্ক সুস্পষ্ট নয়। বিচারক জোনাথান পেনি মন্তব্য করেন যে, আসলে ‘আপস্ট্রিম’-এর জন্য নয়, পাঠক সংখ্যায় প্রভাব সম্ভবত গণমাধ্যমে এনএসএ-এর সম্পর্কে সংবাদের ফলে জনগণের মধ্যে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়ার ফলে তৈরি হয়েছে।