
জেস ওয়েড (ছবি: ডেভ গাট্রিজ, সিসি-বাই-এসএ ৪.০)
সম্প্রতি ইংরেজি উইকিপিডিয়ার একজন নারী অবদানকারী ড. জেস ওয়েড অন্য অবদানকারীদের বিরুদ্ধে জেন্ডার বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এমনটা জানা যায়। ওয়েড একজন ব্রিটিশ পদার্থবিদ। তিনি উইকিপিডিয়ায় গত দুই বছর ধরে ৮২০টি নিবন্ধ তৈরি করেছেন। যার প্রায় সবগুলোই ব্যক্তির জীবনী সংক্রান্ত। ওয়েডের মূল অভিযোগটি হলো: ইংরেজি উইকিপিডিয়ার প্রশাসকবৃন্দ ও সম্পাদকগণ তাঁর লেখা নারী সংক্রান্ত নিবন্ধগুলোর অনেকগুলোকেই অমূলকভাবে উইকিপিডিয়ার জন্য উপযুক্ত নয় বলে চিহ্নিত করেছেন।
ওয়েডের লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী কৃতি নারী ব্যক্তিদের অবদান তুলে ধরার জন্য। এর মাধ্যমে বিজ্ঞান, গণিতশাস্ত্র, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিজ্ঞানে নারীদের মাহাত্ম্যপূর্ণ উপস্থিতি বিশ্ববাসীকে জানান দিতে চেয়েছেন তিনি। কিন্তু একজন ইংরেজি উইকিপিডিয়া সম্পাদক ওয়েডের তৈরিকৃত ৫০টি নিবন্ধকে উইকিপিডিয়ায় থাকার যোগ্য নয় বলে দাবি করেন এবং প্রত্যেকটি নিবন্ধে অনুল্লেখযোগ্যতার ট্যাগ যোগ করে দেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ওয়েড ইংরেজি উইকিপিডিয়াকে নারীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট বলে দাবি করেন। তিনি উত্তর আমেরিকার শ্বেতাঙ্গদের নারী বিদ্বেষী মনোভাবকে এর মূল কারণ হিসেবে অবহিত করেন।
বিবিসি রেডিও ফোর-এর একটি নিয়মিত অনুষ্ঠান উইমেন আওয়ার্স-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, “এই পুরো ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত ও সুনিয়ন্ত্রিত। তারা আমার লেখা সকল নিবন্ধ যাচাই করে এবং কয়েকজন স্বনামধন্য নারী ব্যক্তিত্বের নিবন্ধেও অনুল্লেখযোগ্যতার ট্যাগ বসায়। তার উপরে আমাকে বলা হয় আমি নাকি এসব নিবন্ধ তৈরি করে বরঞ্ছ উইকিপিডিয়ার ক্ষতি করে ফেলেছি।”
উইকিপিডিয়া সকল নিবন্ধ মূলত স্বেচ্ছাসেবক ব্যবহারকারীদের লেখা। আর এসব নিবন্ধের তত্ত্বাবধানের জন্য নিয়োজিত থাকেন প্রশাসকেরা। প্রশাসকগণ উইকিপিডিয়ার নোট্যাবিলিটি নির্দেশিকা বা উল্লেখযোগ্যতার নির্দেশিকার মাধ্যমে মৌলিক জীবনী সংক্রান্ত নিবন্ধের উল্লেখযোগ্যতা যাচাই করেন। এই নির্দেশিকাটিও উইকিপিডিয়ার অবদানকারীগণই ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে তৈরি করেছেন যা সকলেই মেনে চলেন।
ড. জেস ওয়েড তার অভিযোগ সম্পর্কে আরও বলেন, “আমি মূলত উল্লেখযোগ্য সব ধরণের ব্যক্তির নিবন্ধ তৈরি করে থাকি। তাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করেন। এমনকি তাঁরা আজও অনেক প্রতিকূলতাসত্ত্বেও চমৎকার গবেষণা করে চলেছেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলেন কিংবদন্তি রসায়নবিদ ক্লারিস ফেলপস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওক রিজ জাতীয় গবেষণাগারে রসায়ন গবেষণায় নিয়োজিত আছেন।”
ওয়েড আরো উল্লেখ করেন, “তিনিই খুব সম্ভবত প্রথম মার্কিন আফ্রিকান নারী গবেষক যিনি কিনা পর্যায় সারণির ১১৭তম মৌল টেনেসিন আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি নৌবাহিনী পরমাণু গবেষণা প্রকল্পে যোগ দিয়েছিলেন। এই প্রকল্পে যোগ দেওয়া খুবই সম্মানের ব্যাপার। শতকরা মাত্র ১০ জন এই প্রকল্পে যোগ দেওয়ার জন্য মনোনীত হন। আমি ইংরেজি উইকিপিডিয়ায় তাঁর সম্বন্ধে নিবন্ধ তৈরি করলাম। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই তা বাতিল করার জন্য মনোনীত করেন এক সম্পাদক। কারণ হিসেবে বলা হয় তিনি নাকি যথেষ্ট পরিমাণ উল্লেখযোগ্য নন। বিশ্বের দূর এক প্রান্তের কোনো সম্পাদক যিনি তাঁর ব্যাপারে সম্যক অবগতও নন তিনি ঠিক করছেন উইকিপিডিয়ায় কী থাকবে আর কী থাকবে না।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, “আরও অবাক করে দেওয়ার একটা বিষয় হলো ক্লারিস ফেলপসের মত অনেক নারী রয়েছেন যাঁরা প্রতিনিয়ত তাঁদের কর্মক্ষেত্রে চমৎকার কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের কথা কেউ জানে না; জানতে দেয়া হচ্ছে না।”
উইকিপিডিয়ার প্রধান নির্বাহী ক্যাথরিন মাহের, যিনিও একজন নারী, অভিযোগ সম্বন্ধে বলেন, “ঘটনাটি যে কারণে ঘটুক না কেন তা হতাশাজনক। কারণ একজন নারী যিনি কিনা শুধু উইকিপিডিয়ার সাথে যুক্ত থাকবেন বলে উইকিপিডিয়ায় সম্পাদনা করছেন তাঁর কাজগুলোকে প্রতিনিয়ত অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে যা সত্যিই দুঃখজনক।”
উইকিমিডিয়া যুক্তরাজ্যের প্রধান নিবার্হী লুসি ক্রেমপ্টন এ ব্যাপারটি উল্লেখ করে বলেন “উইকিমিডিয়া একটি স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রকল্প। প্রকল্পটির অগ্রযাত্রায় উইকিমিডিয়া যুক্তরাজ্য সব সময়ই চায় যে, উইকিপিডিয়ার সহপ্রকল্পগুলোতে পক্ষপাতমুক্ত হয়ে আমাদের সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য তুলে ধরা হোক। আমরা নারীদের সম্বন্ধে নিবন্ধগুলোর মানোন্নয়নে বিস্তারিত উদ্যোগ নিয়েছি।”
লুসি আরো বলেন, “ড. জেস ওয়েড ২০১৮ সালের বর্ষসেরা উইকিমিডিয়ান পুরস্কারের বিশেষ সম্মাননা লাভ করেন। তিনি উইকিপিডিয়ায় জেন্ডারবৈষম্য নিরসনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। আমি তার মনঃকষ্ট বুঝতে পারছি যখন তার নারী সম্বন্ধীয় নিবন্ধগুলো প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। উইকিমিডিয়া যুক্তরাজ্য আগামীতেও উইকিপিডিয়াকে সমৃদ্ধকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাবে। তাছাড়া আমরা গোটা বিশ্বের সামনে সুবিধাবঞ্চিতদের ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উপস্থাপন করতে সর্বদা সচেষ্ট এবং আগামীতেও সর্বদা সচেষ্ট থাকব বলে আশা করছি।”