উইকিপিডিয়ার স্বেচ্ছাসেবক সম্প্রদায় বলতে প্রয়শ শুধু অনলাইন অবদানকারীদের বোঝানো হয়, যারা কিনা এই সুবিশাল বিশ্বকোষ রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্পাদনা করেন এবং লিখেন। তবে শুধু এই দলের অবদানকারীরা উইকিপিডিয়া, উইকিকমন্স বা অন্যান্য উইকিমিডিয়া প্রকল্পে অবদানকারী এমনটি নয়।
আরও অনেক স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন যারা বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন করে বা অন্যদের আমাদের স্বেচ্ছাসেবক সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত হতে উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমেও অবদান রেখে যাচ্ছেন। যদিও তাদের কাজ সেভাবে চোখে পড়ে না, কিন্তু এটি আমাদের এই আন্দোলনের উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যাবশ্যক।
উইকিমিডিয়া সংগঠককরা সম্প্রদায়কে প্রশিক্ষণ, সহায়তা, নিয়োগ এবং সংগঠিত করতে সাহায্য করে। এছাড়া নতুন অবদানকারী এবং সহযোগীদের যেমন শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানায়, যাতে তারা বিভিন্ন প্রকল্পে অবদান রাখতে পারে। প্রতি বছর উইকিপিডিয়া ও এর সহপ্রকল্পের হাজার হাজার প্রকল্প এবং ইভেন্টগুলির সাথে উইকিপিডিয়ায় নতুন অবদানকারীদের অসংখ্য উপায়ে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন তারা।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও অনেক উইকিমিডিয়া সংগঠক রয়েছেন। উইকিমিডিয়া প্রকল্পে তথা মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ায় যুক্ত বাংলাদেশী স্বেচ্ছাসেবকদের সংগঠিত করার জন্য ২০১১ সালে উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশের চ্যাপ্টার ‘উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ফাউন্ডেশন অনুমোদিত ৩৭টি আঞ্চলিক চ্যাপ্টারের একটি এবং দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র চ্যাপ্টার। দেশের সকল স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে উইকিপিডিয়া সচেতনতা ও অবদান বিষয়ক কর্মশালা, উইকিপিডিয়ানদের মিটআপের আয়োজন, উইকিমিডিয়া প্রকল্পে বাংলাদেশী ছবি সমৃদ্ধির জন্য ছবি প্রতিযোগিতা ও ফটোওয়াক, বাংলা উইকিপিডিয়ার নিবন্ধের মান ও সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য নিবন্ধ প্রতিযোগিতাসহ বছর জুড়ে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকরা কীভাবে তাদের কার্যক্রম আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায় এবং উইকিপিডিয়া সম্পর্কে আরও সচেতন করা যায় সে জন্য অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। অঞ্চলভিত্তিক উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রসারের লক্ষ্যে উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী কমিউনিটি বা সম্প্রদায় রয়েছে।
স্থানীয়ভাবে উইকিমিডিয়া প্রকল্পে অবদান সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে যেকেউ তাদের সাহায্য নিতে পারেন এবং তাদের বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হতে পারেন। উইকিমিডিয়া স্বেচ্ছাসেবীরা প্রতিনিয়ত তাদের কার্যক্রমে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করেন। যাতে তাদের কার্যক্রম আরও শৃঙ্খলাবন্ধ ও বিস্তৃত করা যায়। একসময় যে কার্যক্রম শুধু রাজধানী শহরেই সীমাবদ্ধ ছিল, তা এখন অন্যান্য বিভাগীয় শহর পেরিয়ে অনেক জেলা শহরেও বিস্তৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশী উইকিপিডিয়ানদের কার্যক্রম শুধু বাংলাদেশের মাঝেই সীমাবদ্ধ না। উইকিমিডিয়ার অনেক কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাংলাদেশের উইকিমিডিয়ানদের প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশের উইকিমিডিয়ানদের কার্যক্রম বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমাদৃত হয়েছে।
২০১৬ সালে ইতালিতে অনুষ্ঠিত উইকিম্যানিয়া সম্মেলনে উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের ‘উইকিপিডিয়া স্কুল প্রোগ্রাম’ শীর্ষক প্রকল্পটি শিক্ষামূলক তিনটি সেরা প্রকল্পের মধ্যে একটি বলে বিবেচিত হয়েছিল। উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ সুলতান ২০১৮ সালের বর্ষসেরা উইকিমিডিয়ান (অনারেবল মেনশান) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।
বাংলাদেশের উইকিপিডিয়ানদের অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়ে কাজ করতে হয়। তারপরেও অনেক ক্ষেত্রে তাদের অর্জন ঈর্ষনীয়। তবে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে তাদের। জনসংখ্যার বিচারে বাংলাদেশ থেকে উইকিমিডিয়ানদের সংখ্যা অনেক কম। বাংলা ভাষাভাষীদের প্রতি দশ লাখে উইকিপিডিয়ানের সংখ্যা মাত্র ১ জন। এছাড়া নারীদের অংশগ্রহণও অনেক কম। কীভাবে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো যায়, সেটি কাজ করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।