আগামী কালকে আমার পরীক্ষা, আর আজকে রাতে আমি বসে আছি উইকিপিডিয়াতে – এরকম আজব, বিচিত্র ঘটনা ঘটেছিল আমার জীবনে। মনে হতেই পারে, নিশ্চয়ই আমি আগামীকালকের পরীক্ষার পড়া পড়ছিলাম উইকিপিডিয়াতে? না, মোটেই তা না। আমি মানুষকে আমার পড়া পড়াচ্ছিলাম।
আমি যখন “বাজারজাতকরণ” নিয়ে পড়ছিলাম, বসে বসে বাজারজাতকরণ সম্পর্কে একটা নিবন্ধই লিখে ফেলেছিলাম। পড়ছিলাম “বাজারজাতকরণ গবেষণা” নিয়ে, তৈরি করে ফেলেছিলাম এবিষয়ে আরেকটা নিবন্ধ। পরীক্ষার রাতে মানুষ নিজে পড়ে, আর আমি বাংলা পাঠকদের জন্য উইকিপিডিয়ায় জ্ঞান বিতরণ করে বেড়াচ্ছিলাম। তো নিশ্চয়ই ঐ পরীক্ষায় গোল্লা পেয়েছিলাম?
না, এখানে একটা সূক্ষ্ম বিজ্ঞান ছিল বলেই আসলে আমি ঐ কাজে ব্রতী হয়েছিলাম আর সে যাত্রা বেঁচে গিয়েছিলাম। মানুষের মস্তিষ্ক একটা বিচিত্র জিনিস। এঁর সাথে মাঝে মাঝে ছলছাতুরি করলে উল্টো লাভ হয়। যেমন: আমরা যখন পড়ালেখায় বসি, তখন আমরা বইয়ের অক্ষরগুলোতে এতোটাই নিবিষ্ট হই যে, ঐ একটা জগতেই আমরা থাকি। আবারও পড়তে বসি। আবারও একই জগতেই ঢুকি। আবার পড়তে বসি, আবারও একই জগতে। বিরক্তিকর।
আর এই বিরক্তিকর রুটিনে যদি একটু ব্যতিক্রম করা যায়… আমি পড়তে বসলাম, কিন্তু সেটা বইয়ের জগৎ নয়, জীবন-জগৎ? সেটা তখন অপূর্ব এক টনিকের কাজ করে। গৎবাঁধা পড়লেখাও তখন সুড়সুড় করে মাথায় স্থান করে নেয়। আর এটাই হচ্ছে আমার কৌশল। বইয়ের ছকে বাঁধা লেখাগুলোকে আমি উইকিপিডিয়ার সাদা-কালোতে দেখতে চাচ্ছিলাম, যাতে আমার মাথার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যায়। এটা ছিল আমার মস্তিষ্কের সাথে খেলা একটা বিচিত্র খেলা।
তবে পরীক্ষার রাতে আমি উইকিপিডিয়ায় সময় দিতে কাউকে বলবো না, উল্টো বলবো পারলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কোথাও চলে যেতে। পরীক্ষার রাত্রে না পড়াই উত্তম। যা পড়েছেন, পড়েছেন। এবার সেগুলোকেই ভেঁজে ফেলুন মগজে। আর যে দুঃসাহস আমি করেছিলাম পরীক্ষার রাতে, সেটা নাহয় আপনি অন্য সময় করলেন। প্রেরণার দরকার হলে দেখে নিতে পারেন এবারের উইকিবার্তায় প্রকাশিত একটি লেখা:
– মঈনুল ইসলাম মঈন
২ জুলাই ২০১৯